স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আপেল মাহমুদকে প্রমাণ দিতে হলো তিনি মুক্তি যো দ্ধা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও বীরত্বের স্বীকৃতির জন্য প্রমাণ দিতে হলো গায়ক ও সুরকার আপেল মাহমুদকে—যিনি ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ গানটি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে লাখো মুক্তিযোদ্ধার অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পী শুধু গানে নয়, যুদ্ধের ময়দানে অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়েছেন। অথচ সম্প্রতি তার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়ে আপত্তি জানিয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)-এ অভিযোগ করেন স্বাধীন বাংলা বেতারকর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে জামুকা থেকে নোটিশ পেয়ে গত সোমবার কুমিল্লা সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত শুনানিতে হাজির হন আপেল মাহমুদ। প্রমাণ উপস্থাপন করেন তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন।

শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুনসহ সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে জেলার অন্যান্য অভিযোগ নিয়েও শুনানি হয়।

শাহিনা খাতুন বলেন, “আপেল মাহমুদ কেবল সংগীতের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেননি, বাস্তবেই যুদ্ধ করেছেন। প্রামাণ্য দলিলপত্রে তিনি নিজেকে একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করেছেন। এটি আমরা নিশ্চিত হয়েছি।”

শুনানিতে আপেল মাহমুদ জানান, ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের নেতৃত্বে তিন নম্বর সেক্টরে নরসিংদী, আশুগঞ্জ, ভৈরব, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তিনি। এক যুদ্ধে আহত হয়ে আগরতলায় চিকিৎসা নেন। পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন এবং সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে গান পরিবেশন করেন।

তিনি বলেন, “জীবিত থাকতে আমাকে আবার প্রমাণ করতে হলো আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এটি অত্যন্ত কষ্টের। জামুকার কর্মকর্তারাও বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।”

শুনানিতে আপেল মাহমুদের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী নাসরিন মাহমুদ, শব্দসৈনিক মনোরঞ্জন ঘোষাল, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক আশরাফুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর হায়াত খান, সুভাষ সাহাসহ অনেকেই।

অভিযোগকারী মনোয়ার হোসেনের উদ্দেশ্যে আপেল মাহমুদ বলেন, “আমি কখনও তার কোনো ক্ষতি করিনি। জানি না তিনি কেন এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ করলেন।”

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার জানান, “জামুকার প্রতিনিধিরা ঢাকায় থেকে এসে পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছেন। জেলা প্রশাসন শুধু শুনানির স্থান দিয়েছে।”

উল্লেখ্য, সংগীতে অনন্য অবদানের জন্য ২০০৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন আপেল মাহমুদ। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তার গাওয়া দেশাত্মবোধক গানগুলো আজও মানুষের হৃদয়ে স্থান করে আছে। ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’ তার আরেকটি জনপ্রিয় গান। তিনি রবীন্দ্রসংগীত, লালনগীতি ও গণসংগীতেও সমানভাবে অবদান রেখেছেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন