বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্ভাব্য পদত্যাগ নিয়ে ভারতীয় প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের বিশ্লেষণ ও জল্পনা প্রকাশ পেয়েছে। এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের বরাতে উঠে আসা পদত্যাগের ইঙ্গিতকে ঘিরে ভারতের একাধিক মিডিয়ায় আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে।
ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য ভাষণের খসড়া তৈরি করে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ জানিয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ইউনূস ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।
‘ক্ষমতার দ্বন্দ্ব’ দেখছে ভারতীয় মিডিয়া
‘হিন্দুস্তান টাইমস’ শিরোনাম করেছে— “নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও ইউনূসের মতানৈক্য”। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ এবং রাখাইন করিডোর ইস্যুতে সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং স্পর্শকাতর প্রযুক্তি বিষয়, যেমন ইলন মাস্কের স্টারলিংক, নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের কর্মকাণ্ড এবং করিডোর প্রসঙ্গে তার ভূমিকা নিয়েও সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘ক্ষমতার লড়াইয়ের ইঙ্গিত’ দিয়েছে ‘হিন্দু’
‘হিন্দু’ তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে— “সেনাপ্রধান বনাম প্রধান উপদেষ্টা: ভোটের দিনক্ষণ ঘিরে বাংলাদেশে ক্ষমতার সংঘাত”। তাদের দাবি, সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এক বক্তব্যে সেনাপ্রধান ওয়াকার স্পষ্ট করেছেন যে, ইউনূসের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের সময় হওয়া সমঝোতার বাইরে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির দৃষ্টিভঙ্গি
টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রশ্ন তুলেছে— “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান কি বিদায় নিচ্ছেন?”। তারা বিবিসি বাংলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ড. ইউনূস পদত্যাগের চিন্তায় রয়েছেন।
এই একই তথ্য এনডিটিভিও উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ জানিয়েছে, ইউনূসের পদত্যাগ ভাবনার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ঢাকায় সম্ভাব্য ছাত্র ও ইসলামপন্থিদের আন্দোলনের প্রস্তুতি কাজ করছে।
তাদের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন বার্তায় সেনানিবাস অভিমুখে পদযাত্রা ও সরকারবিরোধী কর্মসূচির আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা, নারী সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ রাখা এবং বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাগুলোকেও ছাত্র ও ধর্মভিত্তিক সংগঠনের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—যেখানে ইউনূস সরাসরি না থাকলেও ‘নীরব সহযোগিতা’ করেছেন বলে দাবি।
আনন্দবাজারের দুটি প্রতিবেদন
আনন্দবাজার পত্রিকা দুটি পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনূস পদত্যাগে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে তিনি এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন। অন্য প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের খসড়া তৈরি করেছিলেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে পুনর্গঠনের চিন্তাও করেছেন।
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ও উপদেষ্টাদের বরাতে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে দীর্ঘ এক বৈঠকে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ইউনূস হতাশা প্রকাশ করেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর এই প্রতিবেদনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরকার সংশ্লিষ্ট কয়েকজন উপদেষ্টা প্রকাশ্যে ভারতীয় মিডিয়ার ভূমিকাকে ‘একতরফা ও প্ররোচনামূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন