শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আজ, অনুমতি পেলে সরাসরি সম্প্রচার

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আজ রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে। বিষয়টি শনিবার রাতে নিশ্চিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালের অনুমতি পেলে অভিযোগ দাখিলের এই প্রক্রিয়া সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে।

এই মামলাটি জুলাই–আগস্টের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে গৃহীত হচ্ছে। এর আগে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ৬ জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে গত ২৫ মে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। তবে এখনো মামলাটির অভিযোগ গঠন হয়নি। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন হবে এবং সেখান থেকেই শুরু হবে বিচার কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঈদুল আজহার পর শেখ হাসিনার মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন বরাবর জমা দেয়। প্রতিবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচটি পৃথক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও অন্য অভিযুক্তরা এসব হত্যাকাণ্ডে উসকানি দিয়েছেন এবং সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, প্রায় দেড় হাজার মানুষ হত্যা, ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে গুলি করে আহত করা, নারীদের ওপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন, লাশ পুড়িয়ে ধ্বংস, আহতদের হাসপাতালে নেওয়ায় বাধা, চিকিৎসা ও পোস্টমর্টেমে বাধাদানসহ একাধিক অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে কল রেকর্ড, অডিও-ভিডিও উপস্থাপন করা হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “শেখ হাসিনা হাসপাতালে গিয়ে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, আহত আন্দোলনকারীদের যেন কোনো চিকিৎসা না দেওয়া হয়। এমনকি রোগীদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি, যাতে অবস্থা খারাপ হলে অঙ্গচ্ছেদ করতে হয়। তিনি সরকারি স্থাপনায় আগুন দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন, যাতে দোষ আন্দোলনকারীদের ঘাড়ে চাপানো যায়।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত মোট ৩৩০টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর অধিকাংশেই শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ রয়েছে। এরপরই তার বিরুদ্ধে একটি পৃথক মামলা দায়ের হয় এবং একই মামলায় সাবেক আইজিপি মামুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে যুক্ত করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন