রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই শীর্ষ নেতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সেনাবাহিনী। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর পায়রা চত্বরে মহানগর আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি ও জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদকে আটক করে তাদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান সেনা সদস্যরা।
এ সময় দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি সেখানে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।
এর আগে কোতোয়ালি থানায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আবেদন করে ফেরার পথে ইমতি ও ইমরানকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে ডেকে পাঠায় বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন এবং জেলা সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুকেও। তাদেরকেও ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেখিয়ে হামলার সময়কার দৃশ্য দেখানো হয় এবং জড়িতদের শনাক্তে সহযোগিতা চাওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতি জানান, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ফোনে জানতে চাওয়া হলে তারা পায়রা চত্বরে আছেন বলে জানালে সেনা সদস্যরা সেখানে চলে আসেন এবং হামলার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।
বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক সামু বলেন, “সেনাবাহিনীর ডাকে আমরা এখানে এসেছি। তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন কেউ এ ঘটনায় জড়িত কিনা। ভিডিওতে একজনকে শনাক্ত করেছি। কেউ দলীয় পরিচয়ে এসব ঘটনায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনার পর রাত ১টার দিকে নিজের ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে লেখেন, “ফ্যাসিস্টদের দোসরদের গ্রেপ্তার না করে যারা অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধাদের বিব্রত করছে, তাদের বলে দিচ্ছি—আগামীকাল রংপুরের রাজপথে আমরা সামনের সারিতে থাকবো।”
এদিকে সেনাবাহিনীর ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, “যারা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান কঠোর। দল-মত বিবেচ্য নয়। অভিযুক্তরা আমাদের সহযোগিতা করছেন, ভিডিও দেখে কিছুজনকে শনাক্তও করেছেন। অনেকের হাতে ছিল লাঠি ও অন্যান্য বস্তু, যা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা এই ঘটনায় বিব্রত এবং রোববার হাজির হবেন বলে জানিয়েছেন।”
এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোতোয়ালি থানায় জাতীয় নাগরিক পার্টির রংপুরের সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন মামলা দায়েরের আবেদন করেন। মামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, রংপুরের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ ১৮ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে রংপুরের সেনপাড়ার স্কাইভিউ বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এনসিপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান, এমনকি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন