মর্গে মৃত ব্যক্তির চোখ খেয়েছে ইঁদুরে, স্বজনরা বলছেন ‘চুরি’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এক মৃতদেহের চোখ নেই—এমন বিস্ময়কর ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, ময়নাতদন্তের সময় মরদেহ থেকে ‘চুরি’ হয়ে গেছে মৃত ব্যক্তির দুই চোখ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মর্গে ইঁদুরের উপদ্রবে এমনটা ঘটে থাকতে পারে।

নিহত ব্যক্তি মাসুম মিয়া (৩৮), রংপুর নগরীর বুড়িরহাট বাহারদুর সিংহ জিপেরপার গ্রামের বাসিন্দা। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মঙ্গলবার সকালে পারিবারিক কলহে শ্যালক সাইদুর ও তার সহযোগীদের হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃতদেহটি মঙ্গলবার দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। পরদিন, বুধবার দুপুরে পোস্টমর্টেমের সময় স্বজনরা দেখেন, মরদেহের দুটি চোখ নেই। এতে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্বজনদের ক্ষোভ ও প্রশ্ন

নিহতের মেয়ে মারুফা বেগম পরশুরাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে সাইদুরসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। মাসুমের ভাগিনা রাকিব বলেন, “গতকাল চোখ ঠিকই ছিল। আজ দেখি দুটি চোখই নেই। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা বিচার চাই।”

প্রতিবেশী আব্দুল জলিল বলেন, “রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ যেন মৃত্যুর পরও নিরাপদ নয়। আগে ওষুধ চুরি হতো, এখন লাশের অঙ্গও যাচ্ছে! এটি অমানবিক ও নিন্দনীয়।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য

হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মানিক ইসলাম ও মর্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মর্গে ইঁদুরের উৎপাত দীর্ঘদিনের সমস্যা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, “ইঁদুর লাশের চোখ খেয়ে ফেলেছে। আমরা আগেও কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

হাসপাতালের উপ-পরিচালক আ. এ. আখতারুজ্জামান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্ত ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয়। ফ্রিজিং ব্যবস্থা উন্নয়নের বিষয়ে আগেও অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেব।”

পুলিশের অবস্থান

পরশুরাম থানার অফিসার ইনচার্জ মাইদুল ইসলাম জানান, “সুরতহালের সময় মরদেহের চোখ ঠিক ছিল। এখন আর নেই। বিষয়টি তদন্তাধীন। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চাপের মুখে হাসপাতাল প্রশাসন

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনায় ভুগছে। নেই আধুনিক ফ্রিজিং ব্যবস্থা, নেই ইঁদুর দমন নীতিমালা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি বারবার বলার পরও সাড়া দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এবার মরদেহের অঙ্গহানির ঘটনায় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর চাপ বাড়ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন