রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মঙ্গলবার রাতে পরিণত হয় উত্তপ্ত সংঘর্ষস্থলে। যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেওয়ার পর, রায় ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মুখোমুখি হয় দুটি ছাত্র সংগঠন—গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ও শাহবাগবিরোধী ঐক্য মঞ্চ। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
ঘটনা ঘটে রাত ৮টার দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট চত্বরে। জামায়াত নেতার খালাসের প্রতিবাদে বামধারার ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট একটি মশাল মিছিলের আয়োজন করে। একই সময় শাহবাগবিরোধী ঐক্য মঞ্চও ‘শাহবাগীদের বিচারের’ দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি নেয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি এবং ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারিক আশরাফ, ছাত্র গণমঞ্চের নাসিম সরকার, ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কাউসার আহমেদ ও সদস্য আহমেদ ইমতিয়াজ। অপরদিকে শাহবাগবিরোধী ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে আহত হয়েছেন শাহরিয়ার তারিফ, তরিকুল, সাইফুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম শহীদ, জি এ সাব্বির ও শিবিরের মিডিয়া ও প্রচার সম্পাদক নওসাজ্জামান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের মশাল মিছিল শুরু হলে শাহবাগবিরোধী কর্মীরা সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ জানায়। একপর্যায়ে শিবিরের কর্মীরা চেয়ার ও ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারেন। সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
পরবর্তীতে মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জামাল নজরুল ভবন’ অতিক্রম করলে পুনরায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্যারিস রোড এলাকায় উভয়পক্ষ আবার মুখোমুখি হয়। তখন বাম নেতা নাসিম সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হলে সংঘর্ষ নতুন করে শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল টিম।
এ বিষয়ে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলেন, "আদালতের রায় যারা মানতে চায় না, তারা ২০১৩ সালেও শাহবাগতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশকে ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আমরা আজকের কর্মসূচিতে তাদের সেই চরিত্রের প্রতিবাদ করেছি।"
অন্যদিকে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি ছিল না তাদের সরাসরি কর্মসূচি, বরং শাহবাগবিরোধী ঐক্যের অংশ হিসেবে কিছু কর্মী অংশ নিয়েছেন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে। চারজন গুরুতর আহত। আমরা এই বর্বর হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, “উভয় পক্ষকেই নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।”
ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ
বামপন্থী ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাত ১০টার দিকে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদল। ‘শিবিরের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস ছাত্রদলের অঙ্গীকার’—এমন নানা স্লোগানে তারা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি
ঘটনার পর রাতেই গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে এবং ‘হামলাকারীর মদদদাতা প্রশাসন চাই না’ সহ বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দেয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন