বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে নারীদের হিজাব খুলে ছবি তোলার অনানুষ্ঠানিক চাপ দিচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স’। বিআরটিএ-র অধীনে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় এ সংস্থার ভূমিকা থাকলেও, হিজাব নিষিদ্ধ করার মতো কোনো সরকারি নির্দেশনা না থাকায় বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
সম্প্রতি মিরপুর-১২ নম্বরের বিআরটিএ অফিসে সরেজমিন তদন্তে উঠে আসে এমন ঘটনা। এক নারী আবেদনকারীকে হিজাব খুলে কান দেখা যায় এমন ছবি তুলতে বলা হলে তিনি রাজি না হওয়ায় মাদ্রাজ আইটির একজন নারী কর্মকর্তা তাকে সেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দেন।
হিজাব পরিহিত অবস্থায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি তোলায় কোনও আইনগত বাধা নেই—এমনটি নিশ্চিত করেছেন বিআরটিএ’র একাধিক কর্মকর্তা। এমনকি বিআরটিএর ওয়েবসাইটেও হিজাব সংক্রান্ত কোনও নিষেধাজ্ঞার উল্লেখ নেই। সেখানে শুধু বলা হয়েছে, “মুখমণ্ডল স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান থাকতে হবে।”
কোন নির্দেশনা নেই, তবু বাধ্য করা হচ্ছে
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিআরটিএ ইন্সপেক্টরের হস্তক্ষেপে পরবর্তীতে অন্য একটি বুথে ওই নারীর ছবি তোলা সম্ভব হলেও, মাদ্রাজ আইটির পক্ষ থেকে কোনো লিখিত বা সরকারি নির্দেশনা দেখাতে পারেননি কর্মকর্তারা। বরং প্রতিষ্ঠানটির একজন নারী কর্মী সাংবাদিককে হুমকি দিয়ে বলেন, “ভালোভাবে শেখানো লাগবে।”
বিআরটিএর দায়িত্বশীলরাও জানেন না এসব নিয়মের কথা
বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, বিষয়টি তার জানা নেই এবং মাদ্রাজ প্রিন্টার্সের সঙ্গে তাদের চুক্তির মেয়াদ আর মাত্র তিন মাস। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত নতুন দরপত্র আহ্বান বা কোম্পানি পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
অন্যদিকে বিআরটিএর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হিজাব পরিহিত নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্সে ছবি তোলায় বিআরটিএর কোনো আপত্তি নেই। বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় এটি পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য একটি বিষয় বলে মত দেন তিনি।
বেসরকারি ড্রাইভিং স্কুলের অভিজ্ঞতাও একই
ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলের ধানমন্ডি শাখার প্রশিক্ষক এবাদত হোসেন জানান, তাদের স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যারা পরীক্ষা দিতে যান, তাদের অনেককেই হিজাব খুলে ছবি তুলতে বলা হয়েছে। এতে করে বহু নারী আবেদন না করেই ফিরে যান।
মাদ্রাজ প্রিন্টার্স ঘিরে বিতর্ক নতুন নয়
২০১৯-২০২০ সালের দরপত্র শেষে ২০২১ সালে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স বাংলাদেশের ৪০ লাখ স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের দায়িত্ব পায়। কিন্তু এর আগেও এই কোম্পানির বিরুদ্ধে কenya-তে ভুয়া ট্যাক্স স্ট্যাম্প বিতরণের অভিযোগ ছিল। বাংলাদেশেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্ড সরবরাহে ব্যর্থ হওয়ার কারণে লাখো আবেদন ঝুলে থাকে। এমনকি ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বিআরটিএ’র গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসীন হয়েছে, যেখানে তারা নিজেরাই বেঁধে দিয়েছে বিতর্কিত নিয়ম—হিজাব খুলে কান দেখা যায় এমন ছবি ছাড়া লাইসেন্স মিলবে না।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য
হিজাবধারী কয়েকজন নারী জানান, বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশ এমনকি ইউরোপ-আমেরিকাতেও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য হিজাব খুলে ছবি তোলার বাধ্যবাধকতা নেই। বাংলাদেশে একটি বিদেশি কোম্পানির এমন অঘোষিত নিয়মের বিরুদ্ধে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন