জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর

জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর

 গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত সহিংসতায় সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা। তবে এই ঘটনাগুলো ‘গণহত্যা’র আইনি সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরেফিন তাজুল ইসলাম।


চিফ প্রসিকিউটর স্পষ্ট করে বলেন, “আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী এগুলো গণহত্যা নয়, বরং মানবতাবিরোধী অপরাধ। বাংলাদেশে যে সহিংসতা ঘটেছে, তা ম্যাসাকার বা গণহারে হত্যাকাণ্ড হতে পারে, কিন্তু জেনোসাইড নয়।”


শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ


তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে এই অপরাধগুলোর মূল পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও দায়িত্বশীল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উসকানি, ষড়যন্ত্র ও মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলাটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন।


একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।


অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া চলছে


তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে। এরপরই শুরু হবে বিচারিক কার্যক্রম।


তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এরপর তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”


উসকানির অভিযোগে শেখ হাসিনা এক নম্বর আসামি


তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’, ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ ইত্যাদি বলে আক্রমণ করেছিলেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠতে উসকে দেন।


চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “এই বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালায়। তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহযোগী বা অক্সিলিয়ারি ফোর্স হিসেবে কাজ করেছে।”


দলীয়ভাবে বিচার হবে কি না?


আওয়ামী লীগের দলীয়ভাবে বিচার হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, “এই বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে গতরাতে সংশোধিত আইনে এই বিষয়ে তদন্তের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তদন্ত সংস্থা চাইলে দলীয় ভূমিকার দিকটিও খতিয়ে দেখতে পারবে।”


উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আইন সংশোধন করে একই ট্রাইব্যুনালের আওতায় মানবতাবিরোধী অপরাধের নতুন তদন্ত শুরু হয়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন