টিকটকারদের হাতে খুন ফটোগ্রাফার , গ্রেপ্তার ১০

রাজধানীর হাজারীবাগে ভয়াবহ এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার জাফরাবাদ এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলার প্রলোভনে ডেকে নিয়ে তরুণ ফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তার দুটি DSLR ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় একদল টিকটকার। ঘটনায় জড়িত ১০ জনকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বুধবার (২১ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা হলো—নাঈম আহম্মেদ (২০), শাহীন আকন্দ ওরফে শাহিনুল (২০), শাহীন চৌকিদার (২২), রহিম সরকার (১৯), নয়ন আহম্মেদ (১৯), রিদয় মাদবর (১৮), আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা (১৯), আনোয়ার হোসেন (১৯), শহিদুল ইসলাম (২০) ও মো. আরমান (১৮)।

তাদের দেওয়া তথ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র—চাপাতি, রামদা ও ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে ছিনতাই হওয়া দুটি DSLR ক্যামেরাও।

পুলিশ জানায়, নিহত নূরুল ইসলাম (২৬) মতিঝিলের এজিবি কলোনির বাসিন্দা এবং পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। ১৫ মে এক ‘বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার’ কথা বলে টিকটকাররা তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে। তাকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে ৫০০ টাকা অগ্রিমও পাঠানো হয়। পরদিন, ১৬ মে সন্ধ্যায় ধানমন্ডির শংকর এলাকা থেকে তাকে ও তার সহযোগী ইমনকে একটি অটোরিকশায় তুলে জাফরাবাদ পুলপাড়ের কাছে একটি স্কুলের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাত ৮টার দিকে সেখানে পৌঁছানোর পরপরই ১০-১২ জন সশস্ত্র হামলাকারী তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইমন দৌড়ে পালিয়ে বাঁচলেও নূরুল ইসলামকে মাথা, ঘাড় ও হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয় এবং তার ক্যামেরা ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। আশপাশের লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে নূরুলকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই ওসমান গনি হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তদন্তে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত একটি টিকটকার চক্রের সদস্য। তারা মনে করত মোবাইলে ভালো ভিডিও করা সম্ভব নয়, DSLR ছাড়া মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করা যায় না—এ বিশ্বাস থেকেই তারা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ফেসবুকে খোঁজ নিয়ে নূরুলের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাকে ফাঁদে ফেলে।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও তারাকান্দায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিসি মাসুদ জানান, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন