বিতর্কিত নির্বাচন হলে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে, দায় নিতে চান না ড. ইউনূস

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকায় দায়িত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, একটি বিতর্কিত নির্বাচনের দায় নিতে তিনি প্রস্তুত নন—কারণ তা তার দীর্ঘদিনের অর্জিত আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

বৃহস্পতিবার সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে পদত্যাগ প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠে আসে। প্রথমে এক ঘণ্টার নির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, পরে সচিবরা বেরিয়ে গেলে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক চলে শুধুমাত্র উপদেষ্টাদের সঙ্গে। সেখানেই ড. ইউনূস নিজের হতাশা প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, গণআন্দোলনের পর শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আহ্বানে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দলগুলো তখন সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল—সংস্কার আগে, নির্বাচন পরে। কিন্তু বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। বরং এখন নানা অজুহাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ বাড়ানো হচ্ছে, যেকোনো ইস্যুতেই সড়ক অবরোধ চলছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া দুই উপদেষ্টা জানান, রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের প্রতি আস্থা না রেখে নির্বাচনকে অবিশ্বাসের আবরণে ঢেকে ফেলেছে। ড. ইউনূস এ পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, "জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে, এটা আমি বারবার বলেছি। এরপর এক দিনও দায়িত্বে থাকব না।" কিন্তু রাজনৈতিক পক্ষগুলো এখনো সন্দেহের চোখে দেখছে।

এদিন বিকেলে বিএনপি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি তোলে এবং হুঁশিয়ারি দেয়, তা না হলে সরকারকে সহযোগিতা কঠিন হবে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানানো হয়।

এদিকে আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের পক্ষে রায় আসায় তার সমর্থকেরা এক সপ্তাহ ধরে রাজপথে আন্দোলনে ছিল। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনের সামনেও অবস্থান নেয় তারা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময় পর ইশরাক ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন এবং শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ তুলে নেয় ছাত্রদল।

সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা যমুনা বাসভবনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে দায়িত্বে থাকার অনুরোধ জানান। এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসেন।

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে তারা ছাত্রনেতাদের সঙ্গে একসঙ্গে গিয়েছেন, নাকি পৃথকভাবে—এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন