ঢাকা, ৩ মে:
দেশে শ্রমিকদের পাওনা বেতন পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া কিছু প্রভাবশালী মালিক ও সাবেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
আজ শনিবার রাজধানীর ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় মালিক অপেক্ষা শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব বেশী’ শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগের পতনের পর দেখা যাচ্ছে, তাদের অনেক মন্ত্রী-এমপি এবং মালিকশ্রেণির লোকজন শ্রমিকদের বকেয়া বেতন না দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারা অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছে, কেউ কেউ বিদেশে বিলাসবহুল জীবনে মত্ত। আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি—যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত, তাদের বাড়ি, জমি, গাড়ি সহ সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে শ্রমিকদের পাওনা মেটানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। যারা শ্রমিকদের ঘাম-রক্তের টাকা মেরে দিয়ে বিদেশে গেছেন, তাদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সাহায্যে রেড এলার্ট দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।”
সরকারি এই উপদেষ্টা বলেন, “এদেশের অনেক মালিকের মধ্যে এখনও ‘আমার শ্রমিক, আমার দায়িত্ব’—এমন মানসিকতা গড়ে ওঠেনি। কিন্তু এই মানসিকতা ছাড়া কোনো শিল্প এগোতে পারে না। আমরা শ্রমিকের পক্ষেই থাকব, তবে মালিকের ন্যায্য দাবিও অস্বীকার করব না।”
তিনি উল্লেখ করেন, “শিল্পখাতে বড় ব্যর্থতা এসেছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে। যারা একদিকে ব্যবসায়ী, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাও ছিলেন, তারাই শ্রমিক শোষণের মূল চালক হয়ে দাঁড়িয়েছেন।”
রানা প্লাজার দুর্ঘটনার স্মৃতি টেনে এনে তিনি বলেন, “সরকারের অবহেলার কারণেই এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর যেভাবে রেশমাকে উদ্ধার দেখানো হয়েছিল, সেটাও ছিল সাজানো নাটক।”
উপদেষ্টা সাখাওয়াত বলেন, “জুলাইয়ের আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এবং খেটে খাওয়া মানুষ অংশ নিয়েছে। তাদের রাস্তায় নামার কারণ দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ, বঞ্চনা আর অবহেলা। এবার তারা প্রতিবাদে মুখর হয়েছে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য।”
মহান মে দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তেজগাঁও কলেজ। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল পায় ৫০ হাজার টাকা, রানারআপ দল পায় ৩০ হাজার টাকা। উভয় দলকে ক্রেস্ট, ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন