রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া একার সিদ্ধান্তে সরকারের একটি প্রকল্প থেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে নিয়েছে।’
তিনি বলেছেন, তাকে নিয়ে কাহিনির যেন শেষ নেই। একের পর এক গুরুতর অভিযোগ, নানা ধরনের গল্প আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হচ্ছে। আর নির্দ্বিধায় এটুকু বলা যায়, তার বিরুদ্ধে আরো নানা ধরনের অভিযোগ আমাদের সামনে আসবে। এটুকু চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। সোমবার (১৮ আগস্ট) ইউটিউব চ্যানেলের মানচিত্র নামক একটি আলোচনায় তিনি এসব অভিযোগ করেন।
পান্না বলেন, ‘মন্ত্রী পদমর্যাদার একজন ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও সরাসরি চাঁদাবাজিতে তার জড়িত থাকার অভিযোগ, তার মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, এলাকায় তার বাবার ক্ষমতার দাপটের অভিযোগ, অস্ত্রের লাইসেন্স, হাঁসের মাংস খেতে নীলা মার্কেটে যাওয়া। এমন সব গুরুতর অভিযোগের সঙ্গে আরেকটি যে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিপরিষদে থাকা সত্ত্বেও সরকারের কিংস পার্টি হিসেবে খ্যাত এনসিপিকে সার্বিক দিক থেকে সহযোগিতা করে যাওয়া তো পুরনো অভিযোগ।’
তিনি বলেন, ‘নতুন যে ভয়ানক তথ্য আমাদের কাছে এসেছে, সরকারের একটি প্রকল্প থেকে তার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হলো তার একার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। উপদেষ্টা পরিষদের আর সবাই যেখানে বিরোধিতা করেছে, তার একার সিদ্ধান্তে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে নেওয়া হলো এবং সম্ভবত গত রবিবার একনেকের সভায় এটি পাস হয়েছে। কালের কণ্ঠ এটি নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে।’
পান্না বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটা করে স্টেডিয়াম করা হবে শেখ রসেলের নামে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়, কাজ শেষে এর ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ৫১ লাখ টাকা। তা এখন বাড়তে বাড়তে সেই ৫১ লাখ টাকার খরচ দাঁড়াচ্ছে ১৪ কোটি টাকার বেশি। তাই বলে এই নয় যে ৫১ লাখ টাকা থেকে এক লাফে ১৪ কোটি টাকাতে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগও বাড়িয়েছে।
২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৩১টি মিনি স্টেডিয়ামের জন্য খরচ হয়েছিল ৬৬ কোটি ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতিটির পেছনে ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ছিল ৫১ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় তখন আওয়ামী লীগ প্রতিটির ব্যয় ধরেছিল ৮ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আওয়ামী লীগও কী পরিমাণ দুর্নীতি করেছিল। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালে দুই বছরের মধ্যে একেবারে ৮ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা হওয়ার তো কথা নয়। আমরা এখানে আওয়ামী লীগের বড় দুর্নীতির অভিযোগ দাঁড় করাতেই পারি। আওয়ামী লীগের সময় যে ভয়ংকর বড় দুর্নীতি হয়েছিল এটিও তার একটি প্রমাণ হতে পারে।
তিনি বলেন, সেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এই সরকার খুব উচ্চকণ্ঠ। ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির নাকি খোঁজ পাওয়া গেছে। এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস সকাল-বিকেল যেখানে যান দেশে কিংবা বিদেশে সব জায়গায় গিয়ে একই গল্প দিয়ে আসছেন। কিন্তু তার সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা কী করছেন? যে কথিত গণ-অভ্যুত্থান বা গণবিপ্লব যা তাদের ভাষা অনুযায়ী হয়েছে একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য এটিই কি তার নমুনা? আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করেছে, নানা অপকর্ম করেছে সেটা আমরা সারা বছরই বলছি, কিন্তু আপনারা কী করছেন?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন