আমরা দেশে আসি পরে দেখা যাবে ক্ষমা চাওয়া, ভুল স্বীকার : ওবায়দুল কাদের

সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, "আমরা যখন দেশে ফিরব এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ পাব, তখন যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে।"

সি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ভারতের কলকাতা থেকে এসব কথা বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের এ শীর্ষ নেতা জানান, জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনের পর তিন মাস ধরে তিনি বারবার বাসা বদলে আত্মগোপনে ছিলেন এবং শেষমেশ নভেম্বর মাসে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ছাত্র আন্দোলনের পটভূমি ও পরিস্থিতি নিয়ে দলীয় পর্যায়েও বিশ্লেষণ চলছে।

তবে আন্দোলনকে তিনি ‘গণউত্থান’ হিসেবে স্বীকার না করে একে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান’ বলে আখ্যা দেন।

৫ আগস্টের দিনটি স্মরণ করে কাদের জানান, তিনি তখন সংসদ ভবন এলাকায় সরকারি বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। ঢাকামুখী মিছিলের খবর পেয়ে তিনি পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের টিভি ও রেডিওতে ভাষণের ঘোষণায় আরও উদ্বেগ তৈরি হয় বলে জানান তিনি।

জানান, স্ত্রীসহ আশ্রয় নেওয়া সেই বাড়িটিও হামলার শিকার হয়। প্রাণ বাঁচাতে তারা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন। আন্দোলনকারীরা পুরো ঘর লুটপাট ও ভাঙচুর করে। স্ত্রী বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে তাকে অসুস্থ বলে জানালেও শেষ পর্যন্ত তারা ঢুকতে চেষ্টা করে।

বর্ণনায় কাদের বলেন, “আমি বলেছিলাম, দরজা খুলে দাও। খুলে দেওয়ার পর তারা আমাকে দেখে থমকে যায়। বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘প্রধানমন্ত্রী তো চলে গেছেন, আপনি যাননি কেন?’ আমি তখন নির্বাক।”

পরে আন্দোলনকারীদের মধ্যেই বিভক্তি দেখা দেয়—কেউ তাকে জনতার হাতে তুলে দেওয়ার, আবার কেউ সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়ার পক্ষে মত দেয়। শেষ পর্যন্ত একটি দল মুখে মাস্ক ও জামা পাল্টে তাকে এবং তার স্ত্রীকে একটি ইজিবাইকে উঠিয়ে নিরাপদে সরিয়ে নেয়।

তিনি বলেন, “রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড় ছিল। তারা বলেছিল, আমরা একজন অসুস্থ আত্মীয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। এভাবে পথঘাট পার হয়ে আমরা নিরাপদ জায়গায় পৌঁছাই।”

৫ আগস্টের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দেশ ছাড়লেও ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত তথ্য কেউ দিতে পারেনি। এমনকি ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করা দলীয় নেতারাও তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন না।

তিনি বলেন, “ভারতে যাওয়ার আগে দলের নেত্রী বা কারও সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল না। কারণ, তল্লাশি চালানো হচ্ছিল, আমাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছিল। আমি একের পর এক বাসা বদলেছি। মেডিসিনের কারণে ঝুঁকি ছিল, তাই দেশ ছাড়তেই হলো।”

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতারা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য ৫ আগস্টে সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে একটি তালিকাও প্রকাশিত হয়েছে। তবে সেই ৬২৬ জনের তালিকায় কাদেরের নাম নেই। তিনি বলেন, “ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয়ের কথা মাথায়ই আসেনি। আমি প্রথম দুই দিন ব্যক্তিগত বাড়িতেই বারবার স্থান বদলেছি।”

৪ আগস্ট রাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক বৈঠকে পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানা যায়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “নানারকম ইঙ্গিত ও আভাস আমরা পেয়েছিলাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী, আমলারা এবং দলীয় নেতাদের সবার মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিল। তবে ৫ আগস্টে যে বিস্ফোরক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা এতটা পরিকল্পিত ও সংগঠিত হবে, তা অনেকেই ভাবেননি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও পুরো বাস্তবতা বুঝিয়ে তুলতে পারেনি।”

আন্দোলন দমনে বাহিনীগুলোর ব্যবহার প্রসঙ্গে কাদের বলেন, “আইন প্রয়োগকারী সংস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে। দলীয়ভাবে আমরা সংগঠিত থাকতে বলেছিলাম। নিজেদের রক্ষা করা অপরিহার্য ছিল।”

ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে কাদের বলেন, “আমাদের দলে এসব নিয়ে চর্চা রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে, দেশের মাটিতে ফিরে আমরা রাজনীতি করতে পারি, তখন যদি ভুল হয়ে থাকে, তার জন্য অবশ্যই অনুশোচনা ও ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতা আমাদের থাকবে। কিন্তু দেশের বাইরে থেকে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন