প্রথা ভেঙে ট্রাম্পকে সম্মান জানালেন সৌদি যুবরাজ

প্রথা ভেঙে ট্রাম্পকে সম্মান জানালেন সৌদি যুবরাজ

 মধ্যপ্রাচ্য সফরের সূচনা হিসেবে মঙ্গলবার (১৩ মে) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পা রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচিই নয়—সফরের প্রথম মুহূর্তেই সৌদির ব্যতিক্রমী কূটনৈতিক আচরণ নজর কেড়েছে সবার।


রীতি ভেঙে দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নিজে বিমানবন্দরে গিয়ে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান—যা সৌদি কূটনীতিতে অত্যন্ত বিরল। সাধারণত বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের অভ্যর্থনায় অংশ নেন প্রাদেশিক গভর্নর বা রাজপরিবারের নিম্নপদস্থ কেউ। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে যুবরাজের সরাসরি উপস্থিতি, দুই দেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এবং সফরের তাৎপর্যকেই তুলে ধরে।


ট্রাম্পকে বহনকারী বিমানটি সৌদি আকাশসীমায় প্রবেশ করার পর থেকেই দেশটির বিমানবাহিনীর দুটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান তাকে রিয়াদ পর্যন্ত নিরাপত্তা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসে—যা এই সফরের গুরুত্বকে আরও দৃশ্যমান করে তোলে। রিয়াদে অবতরণের পর প্রেসিডেন্টকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি বিলাসবহুল গ্র্যান্ড হলে, যেখানে তাকে আপ্যায়ন করা হয় ঐতিহ্যবাহী আরব কফি দিয়ে।


এই সফরের সবচেয়ে আলোচিত দিক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে স্বাক্ষরিত বিশাল অংকের সামরিক ও প্রযুক্তিগত চুক্তি। আরব নিউজের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলারের এই সমঝোতার আওতায় রিয়াদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নত অস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং নজরদারি প্রযুক্তি সংগ্রহ করবে।


বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের চুক্তি শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃঢ়তাই নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামোতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ইরান ও ইয়েমেন সংকটের প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো এখন একটি কৌশলগত অগ্রাধিকার।


এই সফরকে অনেকেই ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিচ্ছেন। কারণ এটি কেবল অর্থনৈতিক সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনের এক বড় প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। গাজায় হামাস-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব, ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে সৌদি অভিযান এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন নতুন করে পর্যালোচিত হচ্ছে।


উল্লেখযোগ্যভাবে, এই সফরের সময় হামাস গাজা থেকে মুক্তি দেয় যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিক এডান আলেকজান্ডারকে, যাকে রেড ক্রসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। ট্রাম্প এই ঘটনাকে ‘উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক বিজয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।


প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরও সৌদি আরব দিয়েই শুরু করেছিলেন ট্রাম্প। এবার দ্বিতীয় মেয়াদেও রিয়াদ সফর দিয়ে শুরু করলেন, যদিও এবারের সফর তালিকায় নেই ইসরায়েল—যা বিশেষ কৌশলগত বার্তার ইঙ্গিত দিচ্ছে।


রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি যুবরাজের এমন ব্যতিক্রমী আতিথেয়তা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক সমীকরণে একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করতে চলেছে। যুদ্ধবিমানের এস্কর্ট থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী আপ্যায়ন—সব কিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে, ওয়াশিংটন ও রিয়াদের সম্পর্ক এখন শুধু উষ্ণ নয়, বরং কৌশলগতভাবে গভীর এক সহযোগিতার পথে হাঁটছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন