হাসিনার নির্বাচনে মৃত ভোটারের ছাড়াছড়ি, কবর থেকে এসে ভোট দেন ২০ লাখ ব্যক্তি!

বাংলাদেশের সদ্য বিলুপ্ত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ২০ লাখ মৃত ব্যক্তির নামে ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসিরউদ্দিন বলেন, "কবরবাসী ভোটাররাও ব্যালট দিয়েছে।" এসব ভুয়া ভোট পড়েছে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে, যেগুলো বিরোধীদলবিহীন একতরফা বলে পরিচিত।

ইসির সর্বশেষ হালনাগাদ কার্যক্রমে বেরিয়ে এসেছে, ভোটার তালিকায় এখনও যুক্ত রয়েছে বিশালসংখ্যক মৃত ব্যক্তির নাম। যদিও বর্তমান কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে এসব নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার। নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফেরাতে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে, যা গত কয়েক বছরেও দেখা যায়নি।

সিইসির ভাষ্যমতে, "আমরা ধারণাও করিনি যে মৃত ভোটারের সংখ্যা এত বেশি হবে। হালনাগাদের ফলে এই চিত্র পরিষ্কার হয়েছে।"

ভোটারের আক্ষেপ, তরুণদের প্রত্যাশা

দীর্ঘ তিনটি নির্বাচনে প্রায় সাড়ে চার কোটি নতুন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাননি। পুরোনো ভোটাররাও ছিলেন বঞ্চিত। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচন নিয়ে আস্থাহীনতা ছিল এর অন্যতম কারণ।

তবে নতুন নেতৃত্ব এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উদ্দীপনা বেড়েছে। বিশেষত, জেনারেশন জেড বা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে আগ্রহ অনেক বেশি। নির্বাচন কমিশনের মতে, এই তরুণরাই আগামী নির্বাচনে বড় একটি প্রভাবক হতে যাচ্ছেন।

ভুয়া ভোট, কম উপস্থিতি ও ভোটারবিহীন কেন্দ্র

দশম ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয় বিরোধীদল ছাড়া। ভোটার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। অথচ, ইসি দাবি করে ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। বাস্তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। এমনকি একাদশ নির্বাচনে আগের রাতে ব্যালট ভর্তি হওয়ার অভিযোগ ওঠে, যা মানুষের মধ্যে ব্যাপক হতাশা তৈরি করে।

সাবেক ইসি সচিব জাহাংগীর আলম স্বীকার করেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত সীমিত। তার এ বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

নতুন ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি

ইসি জানায়, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত হালনাগাদ কার্যক্রমে ৬০ লাখ নাগরিক ফরম পূরণ করেছেন। এর মধ্যে ২৩ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছেন প্রায় ৫০ লাখ। নতুন ভোটার ও বাদপড়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে এবার একটি সঠিক তালিকা তৈরির চেষ্টা করছে কমিশন।

বর্তমানে দেশে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ কোটির কাছাকাছি, যারা সবাই আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছে ইসি।

নতুন প্রজন্ম হবে নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর

বিশ্লেষকদের মতে, আগের তিনটি সংসদ নির্বাচনের মতো প্রহসনের নির্বাচন হলে মানুষ ভোট দিতে আগ্রহ হারাবে। তবে বর্তমান ইসির উদ্যোগ এবং জনগণের অংশগ্রহণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হতে পারে একটি নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর ভোটের উদাহরণ।

স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, "যদি সত্যিকার অর্থে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে মানুষ ভোট দিতে উৎসাহিত হবে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মই এবার ভোটের মাঠে গেম চেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হবে।"

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন