বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশজুড়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচন নিয়ে চাপের কারণে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয় এবং যদি তাকে কাজ করতে না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি পদ থেকে সরে যাবেন।
নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত আগস্টে একটি আদর্শবাদী ছাত্র আন্দোলন ও ব্যাপক গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনে আশা করেছিলেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারে দীর্ঘদিনের ধীরগতির কাজ অনেককে হতাশ করেছে। এই অবস্থায় নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস হুমকি দিয়েছেন, যদি তাকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত স্বাধীনতা না দেওয়া হয়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যখন মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেয়া হয়, তখন দেশে রাস্তাঘাটে সহিংসতা চলছিল। এখন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি বিকাশমান ঐক্যের কারণে তিনি বাধাগ্রস্ত বোধ করছেন। ঐক্য তার কাজের ধীরগতি নিয়ে সমালোচনা করছে।
সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার মুহাম্মদ ইউনূস যদি রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন না পান, তাহলে তিনি বাধাহীনভাবে কাজ করতে পারবেন না এবং পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেনাপ্রধানের নির্বাচনের সময় নির্ধারণ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক মন্তব্যে তিনি অতিরিক্ত চাপ অনুভব করছেন। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমালোচনায় মানসিক চাপও তার ওপর বাড়ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোবাশ্বার হাসান বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস একজন দক্ষ ব্যাংকার ও প্রতিষ্ঠানের নেতা হতে পারেন, কিন্তু তাঁর দৃঢ় ও শক্তিশালী নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। তিনি তার উপদেষ্টাদের দ্বারা প্রভাবিত হবার প্রবণতা রাখেন। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার কাজে যারা সাহায্য করা উচিত ছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে অবহেলা করছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস আগে জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ বাংলাদেশ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে, তবে সুনির্দিষ্ট সময় দেননি। তিনি মনে করেন বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয়। তাঁর ভাষ্য, ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, আর থামবে না, তবে এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে।’
বিএনপি বলছে, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আগে গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট আবশ্যক। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর বিএনপি ক্ষমতা দখলের সুযোগ খুঁজছে।
গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা বলেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে গেলে তিনি জানান, অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন।
ঢাকায় চলমান সড়ক অবরোধ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্যহীনতা ও রাষ্ট্রীয় কাজে অসহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। মুহাম্মদ ইউনূস প্রশ্ন তোলেন, সংস্কারের ব্যাপারে তেমন কিছু অর্জিত না হলে কেন তিনি থাকবেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার এই সংকটে আন্তর্জাতিক নজর এখন মুহাম্মদ ইউনূস ও তার পদত্যাগের সম্ভাবনার ওপর টিকে আছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন